🔘সূরা ফালাক-সূরা নাস এর অসাধারণ সব ফজিলত: আমরা সবাই সূরা দুটি মুখস্থ করি ও জাগতিক অনিষ্ট থেকে আল্লাহর রহমতে পরিত্রান লাভ করি....
উক্ববাহ্ ইবনু 'আমির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ আজ রাতে যে আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর মতো আর কখনো দেখা যায়নি। সেগুলো হ’ল- “কুল আ’উযু বিরব্বিল ফালাক্ব” (সূরাহ্ আল ফালাক্ব) এবং “কুল আ’ঊযু বিরব্বিন্ না-স” (সূরাহ্ আন্ না-স)-এর আয়াত। (ই.ফা. ১৭৬১, ই.সে. ১৭৬৮)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৭৭৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মু’আব্বিযাত’ সূরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। পরবর্তীতে তিনি যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন তখন আমি তাকে ফুঁক দিতে লাগলাম এবং তাঁর-ই হাত দিয়ে তাঁর দেহটি মুছে দিতে লাগলাম। কেননা আমার হাতের তুলনায় তাঁর হাতটি ছিল অনেক বারাকাতপূর্ণ। আর ইয়াহ্ইয়া ইবনু আইয়ূব (রহঃ) ‘মু’আব্বিযাত’ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করতেন।
(ই.ফা. ৫৫২৬, ই.সে. ৫৫৫১)
ফুটনোটঃ
[২৭] সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস কে মু’আববি্যাত বলা হয়
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৬০৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, (আরবী) সু-স্বপ্ন আল্লাহর তরফ হতে, আর (আরবী) দুঃস্বপ্ন ইবলিশের তরফ থেকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন এমন কোন ব্যাপারে স্বপ্নে দেখে, যা সে পছন্দ করে না, তখন সে যেন তার বাম পাশে তিন বার থু থু ফেলে এবং (আ’ঊযুবিল্লাহ্ বা সূরা আল ফালাক্ব ও সূরা আন্ নাস পড়ে) স্বপ্নের অনিষ্ট হতে আশ্রয় চায়। কারণ (এভাবে করলে) তা তার কোন খারাবী করতে পারবে না। রাবী বলেন, আমি এমন স্বপ্নও দেখতাম যা আমার জন্য পাহাড়ের চাইতেও কঠিন (ও ভয়াবহ) কিন্তু এখন অবস্থা এই যে, এ হাদীস যখন আমি শুনে ফেলেছি, এখন আর সে সবের পরোয়া করি না। (ই.ফা. ৫৭০৩, ই.সে. ৫৭৩৫)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭৯৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রত্যেক সালাতের পর সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তে আদেশ করেছেন।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৩৩৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘মুআয ইব্ন আবদুল্লাহ্ তাঁর পিতার মাধ্যমে থেকে বর্ণিতঃ
একবার কিছু বৃষ্টিপাতের পর চতুর্দিক অন্ধকার হয়ে গেল। আমরা আমাদের নিয়ে সালাত আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অপেক্ষা করছিলাম। তারপর তিনি এমন কিছু বললেনঃ যার মর্ম হলো, পরে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায়ার্থে বের হলেন। তিনি বললেনঃ বল! আমি বললামঃ কি বলবো? তিনি বললেনঃ কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক, কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস এবং সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে। সকল বিপদাপদে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৪২৮
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
🔘উকবা ইব্ন আমির জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ বল। আমি বললামঃ কি বলবো? তিনি বললেনঃ বল, কুল হুয়াল্লাহু আহাদ এবং কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস। পরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পাঠ করলেন এবং বললেনঃ কোন ব্যক্তি এই সূরাগুলোর ন্যায় অন্য কিছুর আশ্রয় গ্রহণ করে না করেনি। কিংবা বললেন, কোন লোক এর মত কিছুর আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে না।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৪৩১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সূরা নাস ও ফালাক সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি এই দুটি সূরা দ্বারাই আমাদের ফজরের সালাতে ইমামতি করেন।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৪৩৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিনের কুদৃষ্টি এবং মানুষের কুদৃষ্টি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরে যখন সূরা ফালাক এবং সূরা নাস নাযিল হলো, তখন তিনি ঐ সূরাদ্বয় পড়া আরম্ভ করলেন এবং অন্যগুলো পরিত্যাগ করলেন।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৪৯৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আল-জুহফা ও আল-আবওয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় সফরকালে আমরা হঠাৎ প্রবল বাতাস ও ঘোর অন্ধকারের কবলে পড়ি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘কুল আ‘ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব এবং কুল আ‘ঊযু বিরব্বিন নাস’ সূরাহ দু‘টি পাঠ করে আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং বললেনঃ হে ‘উকবাহ! এ সূরাহ দু‘টি দ্বারা পানাহ চাও। কেননা পানাহ চাওয়ার জন্য এরূপ সূরাহ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ দু‘টি সূরাহ দ্বারা সলাতের ইমামতি করতেও শুনেছি।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৪৬৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাতে শোয়ার জন্য তাঁর বিছানায় এসে দুই হাত একত্র করে ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’, ‘কুল আ’ঊযুবিরব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘কুল আ’ঊযুবি রব্বিন্ নাস’ সূরাহ তিনটি পড়ে (হাতে) ফুঁক দিতেন, অতঃপর সেই হাত দু’টো দিয়ে যতদূর সম্ভব তাঁর শরীর মাসেহ করতেন এবং মাথা হতে মাসেহ শুরু করতেন, তারপর মুখমণ্ডল, শরীরের সম্মুখভাগ, অতঃপর শরীরের যেখানে যেখানে হাত পৌঁছানো সম্ভব। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৫৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘আবদুল আযীয বিন জুরায়জ [(আরবী) অর্থাৎ হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে দুর্বল] থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সলাতে কি (সূরা) পড়তেন? তিনি বলেন প্রথম রাকআতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকআতে সূরাহ কা--ফি-রূন, তৃতীয় রাকআতে সূরাহ ইখলাস ও মুআব্বিয়াতাইন (সূরাহ ফালাক ও নাস) পড়তেন।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১১৭৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
🔘আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, “সকাল-সন্ধ্যায় ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস) এবং ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবল ফালাক্ব’ ও ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবন্নাস’ তিনবার করে পড়। তাহলে প্রতিটি (ক্ষতিকর) জিনিস থেকে নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে।”
ফুটনোটঃ
(তিরমিযী ৩৫৭৫, আবূ দাউদ ৫০৮২, নাসায়ী ৫৪২৮, ৫৪২৯)
রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৪৬৪
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
✅বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সূরা আল-ফালাক (الفلق), আয়াত: ১
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ
উচ্চারণঃ কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিল ফালাক
অর্থঃ বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
সূরা আল-ফালাক (الفلق), আয়াত: ২
مِن شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণঃ মিন শাররি মা-খালাক।
অর্থঃ তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
সূরা আল-ফালাক (الفلق), আয়াত: ৩
وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
উচ্চারণঃ ওয়া মিন শাররি গা-ছিকিন ইযা-ওয়াকাব।
অর্থঃ অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
সূরা আল-ফালাক (الفلق), আয়াত: ৪
وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِى ٱلْعُقَدِ
উচ্চারণঃ ওয়া মিন শাররিন নাফফা-ছা-তি ফিল ‘উকাদ।
অর্থঃ গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জা-দুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে
সূরা আল-ফালাক (الفلق), আয়াত: ৫
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
উচ্চারণঃ ওয়া মিন শাররি হা-ছিদিন ইযা-হাছাদ।
অর্থঃ এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।
✅বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
সূরা আন-নাস (الناس), আয়াত: ১
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ
উচ্চারণঃ কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিন্না-ছ,
অর্থঃ বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার,
সূরা আন-নাস (الناس), আয়াত: ২
مَلِكِ ٱلنَّاسِ
উচ্চারণঃ মালিকিন্না-ছ,
অর্থঃ মানুষের অধিপতির,
সূরা আন-নাস (الناس), আয়াত: ৩
إِلَٰهِ ٱلنَّاسِ
উচ্চারণঃ ইলা-হিন্না-ছ।
অর্থঃ মানুষের মা’বুদের
সূরা আন-নাস (الناس), আয়াত: ৪
مِن شَرِّ ٱلْوَسْوَاسِ ٱلْخَنَّاسِ
উচ্চারণঃ মিন শাররিল ওয়াছ ওয়া-ছিল খান্না-ছ।
অর্থঃ তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে,
সূরা আন-নাস (الناس), আয়াত: ৫
ٱلَّذِى يُوَسْوِسُ فِى صُدُورِ ٱلنَّاسِ
উচ্চারণঃ আল্লাযী ইউওয়াছবিছুফী সুদূরিন্নাছ-।
অর্থঃ যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে
সূরা আন-নাস (الناس), আয়াত: ৬
مِنَ ٱلْجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ
উচ্চারণঃ মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-ছ।
অর্থঃ জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে।
সুবহানাল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আল্লাহু আকবার
লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম
আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন